এ সরকারের বিচার জনগণের আদালতে হবে : সিলেটে মির্জা ফখরুল
সিলেট প্রতিনিধি
‘ আওয়ামী লীগ সরকার দেশের নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে ফেলেছে। ২০১৪ সালের নির্বাচন কি সুষ্ঠু হয়েছে? হয়নি। তারা ২০১৮ সালের নির্বাচনে রাতের ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছে। এ সরকার মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করেছে। তাদের বিচার এ দেশের জনগণ করবে। জনগণের আদালতে তাদের বিচার হবে।’- কথা গুলো আজ সিলেটে সমাবেশে বলেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি আরও বলেন- ‘দেশের মানুষ এখন শান্তিতে নেই। প্রতিদিনই নিত্যেপণ্যের দাম বাড়ছে। চালের দাম বৃদ্ধি হয়েছে। অথচ আওয়ামী লীগ বলেছিলে ১০ টাকা কেজি ধরে চাল খাওয়াবে। কিন্তু এখন ৭০ থেকে ৮০ টাকার কম চাল মিলে না। দেশের ৩ কোটি মানুষ বেকার। এ সরকার গত ১৪ বছরে বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়িতে পরিণত করেছে।’
শনিবার (১৯ নভেম্বর) বিকেলে সিলেট সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে জ্বালানি তেল ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ এবং দলীয় চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে সিলেটে অনুষ্ঠিত বিভাগীয় গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আওয়ামী লীগ মামলা মামলা খেলায় লিপ্ত রয়েছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন- ‘তারা আমাদের ৩৫ লক্ষ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মামলা দিয়েছে। এখনও দিচ্ছে। গায়েবি মামলায় আমাদের অনেক নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করেছে। এভাবে গত ১৪ বছর ধরে তারা এই দেশের মানুষের ওপর অত্যাচার নির্যাতনের স্টিমরোলার চালিয়ে যাচ্ছে। আর যদি কোনো নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয় বা মিথ্যা মামলা দেয়া হয় এদেশের মানুষ প্রতিহত করবে।’
সংবিধান নিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন- ‘প্রধানমন্ত্রী সংবিধানের দোহাই দিয়ে যাচ্ছেন। এ সংবিধান তো তিনি তৈরি করেছেন। কিন্তু যে সংবিধান কাটাচেড়া করে তিনি নতুন করে নিজের মতো সরকারের অধীনে নির্বাচনের কথা বলেছেন। তা তো হতে পারে না। নির্বাচন হতে নিরেপক্ষ সরকারের অধীনে। কোনো সরকারের অধীনে নয়। আমরা এদেশের মানুষের অধিকার নিয়ে আন্দোলনে নেমেছি। বিজয় নিয়ে ঘরে ফিরবো।’
তিনি বলেন- আমাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই ফ্যাসিস্ট-দানবীয় সরকারকে পরাজিত করতে হবে। যারা আমাদের সমস্ত স্বপ্নগুলোকে ধ্বংস করে দিয়েছে, অর্জনগুলোকে ধ্বংস করে দিয়েছে, তাদের পরাজিত করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
মির্জা ফখরুল বলেন- ‘আমরা পরিষ্কার করে বলেছি- অবিলম্বে শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে, সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। ঝাড়ি-ঝুড়ি খাটবে না। পুলিশ দিয়ে, আমলা দিয়ে রাতের অন্ধকারে সবকিছু পাল্টিয়ে দেবা; ইভিএম করবা- ওটা হবে না…। জনগণ তার ভোট এবার দেখে নেবে। করায়-গণ্ডায় বুঝে নেবে। সেই ভোট হতে হবে এবং জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা হবে।’
সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এমরান আহমদ চৌধুরী ও মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব মিফতাহ সিদ্দিকীর পরিচালনায় শুরু হওয়া সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল আরও বলেন- ‘ভোলায় আব্দুর রহিম, নূরে আলম নারায়ণগঞ্জে শাওন প্রধান এবং মুন্সীগঞ্জে শাওনকে এই সরকারের পুলিশ এবং গুন্ডাবাহিনী হত্যা করেছে। তারা মনে করছে আগের মতো হত্যা করলে সবকিছু থেমে থাকবে, কিন্তু থেমে থাকেনি উজ্জীবিত হয়ে উঠেছে। অনুপ্রাণিত হয়েছে এবং একটার পর একটা বিভাগীয় সমাবেশ বেশি জনসমাগমের মাধ্যমে সফল হচ্ছে।’
সকল রাজনৈতিক দল ও মানুষের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন- ‘আসুন এখন আর বসে থাকার সময় নেই। সমস্ত রাজনৈতিক দল, ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান- আমরা সকলে এক হয়ে যেভাবে ৭১ সালে লড়াই করেছিলাম, সংগ্রাম করেছিলাম সেইভাবে এই ভয়াবহ দানব সরকারকে পরাজিত করে জনগণের একটি সরকার প্রতিষ্ঠা করি। জনগণের রাষ্ট্র নির্মাণ করি।’
তিনি সিলেটবাসীর উদ্দেশ্যে বলেন- ‘সিলেটের ইতিহাস যুদ্ধের ইতিহাস। এ সিলেটের মাঠি পবিত্র। যেখান থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার যুদ্ধ শুরু হয়েছিল। এই সিলেটের কর্নেল এমএজি আতাউল গনী ওসমানী মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছেন। ৭১-এর ডিসেম্বরে এ সিলেটকে মুক্ত ঘোষণা দিয়েছিলেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান।’
সিলেটবাসীর উদ্দেশ্যে তিনি আরও বলেন- ‘আপনারা অনেক সৌভাগ্যবান যে আমরা যার নেতৃত্বে কাজ করছি, সে আপনাদের জামাতা। এটা আমাদের গর্ব।’
তিনি সমাবেশে উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন- ‘আপনারা একটি নতুন যুদ্ধ শুরু করেছেন। আজ এ যুদ্ধ আপনাদের নতুন যুদ্ধ। এই যুদ্ধ আপনাদের অধিকার ফিরে পাওয়ার যুদ্ধ। এই যুদ্ধ আপনাদের ভোটের অধিকার ফিরে পাওয়ার। এই যুদ্ধ আপনাদের ভাতের অধিকার ফিরে পাওয়ার। সিলেটের ইতিহাস হচ্ছে যুদ্ধের ইতিহাস। আপনাদের ইতিহাস যুদ্ধে জয়ের ইতিহাস। আজকে সিলেটের পুণ্যভূমি থেকে যুদ্ধ শুরু হলো, এই যুদ্ধে আমরা অবশ্যই জয়ী হব।’
সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা খন্দকার খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির, ফজলুর রহমান, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও ইলিয়াসপত্নী তাহসিনা রুশদী লুনা, উপদেষ্টা ডা. এনামুল হক, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মুয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাংগঠনিক সম্পাদক সাখাওয়াত হাসান জীবন, সহসাংগঠনিক সম্পাদক কলিম উদ্দিন মিলন, সহ কৃষি ও ঋণ বিষয়ক সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রাজ্জাক, কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল, ছাত্রদলের সভাপতি রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণ প্রমুখ।